অথবা, বস্তুগত বিবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী? একে কেন যথার্থ বিবর্তনের মর্যাদা দেওয়া যায় না?
বস্তুগত বিবর্তন:
বিবর্তনের সাধারণ আকারগত রূপ ছাড়াও বস্তুগত বিবর্তন (material obversion) নামে আরও একপ্রকার বিবর্তনের পরিচয় পাওয়া যায়। এই ধরনের বিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন প্রখ্যাত তর্কবিদ আলেকজান্ডার বেন (Alexzender Bain)। তিনি এই ধরনের বিবর্তনকে যথার্থ বিবর্তনরূপেই গণ্য করেছেন। এই ধরনের বিবর্তনের ক্ষেত্রে কিন্তু আকারগত বিবর্তনের যে নিয়মগুলি আছে, সেগুলিকে আদৌ অনুসরণ করা হয় না। এরূপ বিবর্তনের ক্ষেত্রে তাই বিবর্তনীয় বাক্য তথা যুক্তিবাক্যের পদ দুটির অর্থগত বিরুদ্ধ পদ দুটিকে সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ও বিধেয় রূপে গণ্য করে একটি নতুন বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এক্ষেত্রে যুক্তিবাক্যের
উদ্দেশ্যের অর্থগত বিরুদ্ধ পদকে সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হিসেবে এবং বিধেয়ের অর্থগত বিরুদ্ধ পদকে সিদ্ধান্তের বিধেয় হিসেবে গণ্য করা হয়। এই অর্থগত বিরুদ্ধ পদ চয়ন করার জন্য আমাদের অভিজ্ঞতাকেই মূলত কাজে লাগানো হয়ে থাকে। কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে বস্তুগত বিবর্তনের বিষয়টি আরও সহজে উল্লেখ করা যায়-
উদাহরণ 1
জ্ঞান হল শক্তি (A) ( আবর্তনীয়)
অজ্ঞানতাই হল দুর্বলতা (A) ↓(আবর্তিত) (বস্তুগতভাবে)
উদাহরণ 2
আলো হল শুভ (A) (আবর্তনীয়)
অন্ধকার হল অ-শুভ (A)↓ (আবর্তিত) (বস্তুগতভাবে)
উদাহরণ 3
সততা হয় ধর্ম (A) (আবর্তনীয়)
অসততা হয় অ-ধর্ম (A) ↓ (আবর্তিত) (বস্তুগতভাবে)
বস্তুগত বিবর্তনের বৈশিষ্ট্য:
বস্তুগত বিবর্তনের উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নের বৈশিষ্ট্যগুলি ফুটে ওঠে।
▶▶প্রথমত: যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ দুটি পারস্পরিকভাবে বিরুদ্ধ পদরূপে গণ্য।
▶▶ দ্বিতীয়ত: যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্ত-উভয়েই সদর্থক তথা হ্যাঁ-বাচক বচনরূপে গণ্য।
▶▶তৃতীয়ত: যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্ত-উভয়েই সামান্য বা সার্বিক বচন রূপে গণ্য।
▶▶ চতুর্থত: বস্তুগত বিবর্তনে বচনের আকারের ওপর গুরত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র বিরুদ্ধ অর্থের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
▶▶ পঞ্চমত: বস্তুগত বিবর্তনে বিরুদ্ধ পদের অর্থের ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
▶▶▶ষষ্ঠত: বস্তুগত বিবর্তনকে আকারগত বিবর্তন না বলে, এক বিশেষ ধরনের আবর্তনরূপে স্বীকার করা হয়েছে।
বস্তুগত বিবর্তনে ওঠা প্রশ্ন:
বস্তুগত বিবর্তনের ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি উঠে আসে, তা হল বস্তুগত বিবর্তনকে কি প্রকৃত বা যথার্থ বিবর্তন বলা যায়? বেন এবং তাঁর সহযোগীদের দাবি হল বস্তুগত বিবর্তন এক ধরনের যথার্থ বা প্রকৃত বিবর্তনরূপেই গণ্য। কারণ, এখানে একটিমাত্র যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তে একটি নতুন বচনই প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বস্তুগত বিবর্তন কিন্তু প্রকৃত বিবর্তন নয়:
যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বস্তুগত বিবর্তনকে প্রকৃত বা যথার্থ বিবর্তনরূপে গণ্য করা যায় না। কারণ, আমরা যথার্থ বা প্রকৃত অনুমান বলতে আকারগত সাধারণ বিবর্তনকেই বুঝে থাকি। সেখানে আকারই হল সর্বস্ব, অর্থের কোনো ভূমিকা সেখানে নেই। অথচ দেখা যায় যে, বস্তুগত বিবর্তনে আকার এবং আকারের নিয়মগুলিকে উপেক্ষা করে বিরুদ্ধ অর্থের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আকারগত বিবর্তনে দাবি করা হয় যে, যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য একই হবে। কিন্তু বস্তুগত বিবর্তনে যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধ পদকে সিদ্ধান্তের বিধেয়রূপে গণ্য করা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা যায় যে, আকারগত বিবর্তনে বলা হয়েছে যে, যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্তের গুণ ভিন্ন হবে। কিন্তু বস্তুগত বিবর্তনে যুক্তিবাক্য বা সিদ্ধান্তের গুণ একই থাকে। সুতরাং দাবি করা যায় যে, বস্তুগত বিবর্তনকে প্রকৃত বা যথার্থ বিবর্তনের মর্যাদা দেওয়া সংগত নয়।
0 Comments:
Post a Comment
Write Your thinking 🤔